25 August 2021

কল্পনা

আমার আড়াই বছরের প্রতিবেশী মোহরের আজকাল গান, নাচ, কবিতা, ছবি আঁকা সব কিছুতেই বেশ আগ্রহ জন্মেছে। গোটা পাড়ার মধ্যে থেকে সে আমাকেই বেছে নিয়েছে নিজের যোগ্য শিক্ষিকা হিসেবে। অবশ্য আমাদের সম্পর্কটা বয়সের ব্যবধান অতিক্রম করে বন্ধুত্বের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। যদিও তাকে কিছু শেখানো মানে যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দেওয়া, তবে আমার তা বেশ লাগে। ওর ছোট্ট হাত কোনদিন আমার হারমোনিয়ামের সা বাজাতে চায় তো কোনদিন বেলো করে। ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে নাচও তার বেশ পছন্দের। তবে আমের সবথেকে বেশি কৌতূহল হয় যখন ও ছবি আঁকবে বলে।

একটা সাদা পাতা আর একটা পেন দিলে ও নিজেকে পিকাসো প্রমাণ করতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। আর আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি ওর দিকে। সাদা পাতাটাতে একটা আঁকিবুকি কাটার পর ও কি এঁকেছে তা বোঝায়। কোনদিন ওর আঁকিবুকি ওদের বাড়ির আমগাছটা আর তার ডালে বসা পাখিগুলোর গল্প বলে, কোনদিন ও আস্তো একটা বাজারের গল্প বলে, আগের দিন ওর ঠামের সাথে দেখা টিভির সিরিয়ালের গল্পও বলে আবার কোন কোন দিন।
একটা পেনের দাগ কে কিভাবে একটা আস্ত গল্পে পরিনত করতে হয় তা আমি প্রতিদিন শিখি মোহরের কাছে।
সাহিত্য ও সমাজকর্ম নিয়ে পড়াশোনা ও এই জগতেই কাজের সুবাদে মানুষের চিন্তাধারা আমাকে বরাবরই আকর্ষণ করে, বিশেষত শিশুদের কোন কিছু জানা, বোঝা এবং তা অন্যকে বোঝানোর প্রচেষ্টা বেশ রোমাঞ্চকর লাগে আমার কাছে। আমি প্রতিদিন বোঝার চেষ্টা করি মোহর তার আঁকিবুঁকি থেকে আজ কি গল্প বলবে, কিন্তু প্রতিদিনই আমার প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ প্রমান করে নিজের কল্পনাশক্তিকে আরও সজীব, আরও সুন্দর করে পরিবেশন করে সে।
কল্পনা কি এতো রঙ্গিন হতে পারে ? হয়তোবা মোহরদের চোখে সবকিছুই এতো সুন্দর, এতো মনোরম। সরলতার সাগরে সবই মায়াবী। আর আমাদের মতো প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য কঠোরতার কুঠারের আঘাতে গড়া বাস্তবই প্রাপ্য, শত চেষ্টাতেও যা সহজ হয়না।


No comments: